Ishwar Chandra Vidyasagar, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, ᱠᱟᱞᱤᱠᱨᱤᱥᱱᱟ ᱢᱤᱛᱨᱚ, ईश्वर चन्द्र विद्यासागर

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর

অরিন্দম ভৌমিক।

(১২ই অশ্বিন ১২২৭ বঙ্গাব্দ - ১৩ শ্রাবণ ১২৯৮ বঙ্গাব্দ)

(২৬ সেপ্টেম্বর ১৮২০ - ২৯ জুলাই ১৮৯১)

বাংলা, হিন্দি, তামিল, ইংরেজি ইত্যাদি বহু ভাষায় দেশে এবং বিদেশে বহু জ্ঞানী-গুণী মানুষ বিদ্যাসাগরের জীবন চরিত লিখেছেন। তাঁর সম্পর্কে লিখতে গিয়ে প্রথমেই মনে পড়ে আচার্য রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী মহাশয়ের লেখা -

"অনুবীক্ষণ নামে এক রকম যন্ত্র আছে, যাহাতে ছোট জিনিষকে বড় করিয়া দেখায়, বড় জিনিষকে ছোট দেখাইবার নিমিত্ত উপায় পদার্থবিদ্যাশাস্ত্রে নির্দ্দিষ্ট থাকিলেও, ঐ উদ্দেশ্যে নির্ম্মিত কোন যন্ত্র আমাদের মধ্যে সর্বদা ব্যবহৃত হয় না। কিন্তু বিদ্যাসাগরের জীবনচরিত বড় জিনিষকে ছোট দেখাইবার জন্য নির্ম্মিত যন্ত্রস্বরূপ। আমাদের দেশের মধ্যে যাহারা খুব বড় বলিয়া আমাদের নিকট পরিচিত, ঐ গ্রন্থ একখানি সম্মুখে ধরিবামাত্র তাঁহারা সহসা অতিমাত্র ক্ষুদ্র হইয়া পড়েন; এবং এই যে বাঙ্গালীত্ব লইয়া আমরা অহোরাত্র আস্ফালন করিয়া থাকি, তাহাও অতি ক্ষুদ্র ও শীর্ণ কলেবর ধারণ করে। এই চতুষ্পার্শস্থ ক্ষুদ্রতার মধ্যস্থলে বিদ্যাসাগরের মূর্ত্তি ধবল পর্বতের ন্যায় শীর্ষ তুলিয়া দণ্ডায়মান থাকে, কাহারও সাধ্য নাই যে, সেই উচ্চ চূড়া অতিক্রম করে বা স্পর্শ করে।"

পিতা ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মাতা ভগবতী দেবী।
পিতা ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মাতা ভগবতী দেবী।

আজ থেকে বহু বছর আগেই আচার্য রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী সংশয় প্রকাশ করেছিলেন যে, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর নামটি উচ্চারণের আমাদের কোন অধিকার অছে কিনা। আজ বহু বছর পরেও তাঁর সেই উক্তি খুবই প্রাসঙ্গিক -

"রত্নাকরের রামনাম উচ্চারণে অধিকার ছিল না। অগত্যা মরা বলিয়া তাঁহাকে উদ্ধার করিতে হইয়াছিল। এই পুরাতন পৌরাণিক নজীরের দোহাই দিয়া আমাদিগকেও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের নামকীর্ত্তনে প্রবৃত্ত হইতে হইবে। নতুবা ঐ নাম গ্রহণ করিতে আমাদের কোনরূপ অধিকার আছে কি না, এ বিষয়ে ঘোর সংশয়, আরম্ভেই উপস্থিত হইবার সম্ভাবনা। বস্তুতই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এত বড় ও আমরা এত ছোট, তিনি এত সোজা ও আমরা এত বাঁকা যে, তাঁহার নামগ্রহণ আমাদের পক্ষে বিষম আস্পর্দ্ধার কথা বলিয়া বিবেচিত হইতে পারে। বাঙ্গালী জাতির প্রাচীন ইতিহাস কেমন ছিল, ঠিক স্পষ্ট জানিবার উপায় নাই। লক্ষণসেন-ঘটিত প্রাচীন কিংবদন্তীটা অনৈতিহাসিক বলিয়া উড়াইয়া দেওয়া যাইতে পারে। কিন্তু পলাশীর লড়াইএর কিছু দিন পূর্ব হইতে আজ পর্য্যন্ত বাঙালীর চরিত্র ইতিহাসে যে স্থান লাভ করিয়া আসিয়াছে, বিদ্যাসাগরের চরিত্র তাহা অপেক্ষায় এত উচ্চে অবস্থিত যে, তাঁহাকে বাঙালী বলিয়া পরিচয় দিতেই অনেক সময়ে কুন্ঠিত হইতে হয়।"

এই প্রবন্ধটি অরিন্দম ভৌমিক কর্তৃক সংকলিত
এই প্রবন্ধটি অরিন্দম ভৌমিক কর্তৃক সংকলিত "বিদ্যাসাগর চরিত" গ্রন্থের 'প্রসঙ্গ কথা' থেকে নেওয়া। গ্রন্থের লেখক স্বয়ং ঈস্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। প্রথম প্রকাশ - ০৮ জুন ২০১৯ (বিশ্ব মহাসাগর দিবস) / দ্বিতীয় সংস্করণ - ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ (গণেশ চতুর্থী) / তৃতীয় সংস্করণ - ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ (বিশ্বকর্ম্মা পূজা) / চতুর্থ সংস্করণ - ২৯ জুলাই ২০২০ (তিরোধান দিবস)

মেদিনীপুর (পশ্চিম) জেলার বীরসিংহের ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। পিতা রামজয় তর্কভূষণ দেশত্যাগী হওয়ায় মাত্র ১৪/১৫ বছর বয়সে মায়ের (দূর্গাদেবী) অনুমতি নিয়ে উপার্জনের চেষ্টায় কলকাতা গিয়েছিলেন। রামকান্ত তর্কবাগীশের দ্বিতীয়া কন্যা ভগবতী দেবীর সঙ্গে বিয়ে হয় ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের।

এঁদেরই ঘরে ১৮২০ খ্রীষ্টাব্দের ২৬ সেপ্টেম্বর ঈশ্বরচন্দ্রের জন্ম হয়। গ্রামে কালীকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের কাছে শিক্ষা শুরু এবং পরে কলকাতায় স্বরূপচন্দ্র দাসের পাঠশালায়। গ্রাম থেকে কলকাতা যাওয়ার পথে মাইলস্টোন দেখেই ইংরেজি সংখ্যা শিখে নেওয়ায়, অনেকেই ঠাকুরদাসকে পরামর্শ দিয়েছিলেন যে - মেধাবী ঈশ্বরকে ইংরেজি স্কুলে দিলে বড় চাকরি পাবে। কিন্তু পণ্ডিত বংশের পিতা ঠাকুরদাস পুত্রকে পণ্ডিত দেখতে চেয়েছিলেন। তাই তাঁকে ভর্তি করলেন সংস্কৃত কলেজে। সেখানে অধ্যয়ন শেষে ব্যাকরণ, কাব্য, অলঙ্কার, বেদান্ত, ন্যায়, জ্যোতিষ, ধর্ম্ম ইত্যাদি সমস্ত পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেন। তাঁর অভূতপূর্ব সাফল্যে ১৮৪১ খ্রীষ্টাব্দের ১০ ডিসেম্বর কলেজের অধ্যাপকরা তাঁকে যে প্রশংসাপত্র দেন তা নিম্নরূপ।

অস্মাভিঃ শ্রী ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরায় প্রশংসাপত্রং দীয়ত। অসৌ কলিকাতায়াং শ্রীযুতকোম্পানি সংস্থাপিত বিদ্যামন্দিরে ১২ দ্বাদশ বৎসরান্ ৫ পঞ্চমাসাংশ্চোপস্থায়াধোলিখিত শাস্ত্রাণ্যধীতবান্

ব্যাকরণম্... শ্রী গঙ্গাধর শর্ম্মভিঃ

কাব্যশাস্ত্রম্ ... শ্রীজয়গোপাল শর্ম্মভিঃ

অলঙ্কারশাস্ত্রম্ ... শ্রীপ্রেমচন্দ্র শর্ম্মভিঃ

বেদান্তশাস্ত্রম্ ... শ্রীশম্ভুচন্দ্র শর্ম্মভিঃ

ন্যায়শাস্ত্রম্ ... শ্রীজয়নারায়ণ শর্ম্মভিঃ

জ্যোতিঃশাস্ত্রম্ ...শ্রীযোগধ্যান শর্ম্মভিঃ

ধর্মশাস্ত্রম্ ... শ্রীশম্ভুচন্দ্র শর্ম্মভিঃ

সুশীলতয়োপস্থিতস্বৈতস্বৈতেষু শাস্ত্রেষু সমীচীনা ব্যুৎপত্তিরজনিষ্ট।

১৭৬৩ এতচ্ছকাব্দীয় সৌরমার্গশীর্ষস্য বিংশতি দিবসীয়ং।

Sd. Rasomay Dutta. Secretary.

10 December, 1841.

আগেই (২২ এপ্রিল ১৮৩৯) তিনি 'ল' পাশ করেছিলেন। পরে কর্মজীবনে হিন্দি ও ইংরেজি ভাষা সাহিত্যে শিক্ষাগ্রহণ করেন। ছাত্রাবস্থা কেটেছে অপরিসীম দারিদ্রের মধ্যে। করতে হয়েছে কঠোর পরিশ্রম। বাজার করা, রান্না করা, বাবা ও ভাইদের খাওয়ানো ও থালা-বাসন ধোয়া তাঁর নিত্যনৈমিত্যিক কাজ ছিল। ফলে পড়তে হত রাত জেগে। তেল কেনার সামর্থ্য না থাকায় অনেকদিন রাস্তায় গ্যাসের বাতির অলোয় পড়তে হয়েছে তাঁকে। পুত্রের জন্য পিতাও করতেন কঠোর পরিশ্রম।

পিতা ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মাতা ভগবতী দেবী।

প্রশংসাপত্র লাভের কিছুদিন পরেই চাকরি পেলেন ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের প্রধান পণ্ডিতের পদে। শুরু হল তাঁর অসাধারণ ও বর্ণোজ্জ্বল কর্মজীবন। তার পাঁচ বছর বাদে যোগ দিলেন সংস্কৃত কলেজে সহকারী সম্পাদক রূপে। নামে কলেজ হলেও সংস্কৃত কলেজ ছিল পাকা দালানে অবস্থিত একটি টোল। তিনি এসে পাঠ্য বিষয় ও প্রশাসনে অনেক সংস্কার সাধন করলেন। এ নিয়ে সম্পাদকের সঙ্গে তাঁর মতবিরোধ হলে বিদ্যাসাগর পদত্যাগ করলেন। প্রায় দেড় বছর কর্মহীন থাকার পর বিদ্যাসাগর আবার যোগ দিলেন ফোর্ট উইলিয়ম কলেজে হেড রাইটারের পদে। এখানে দেড় বছর কাজ করে দ্বিতীয় বারের জন্য এলেন সংস্কৃত কলেজে সাহিত্যের অধ্যাপক হয়ে। পেলেন অধ্যক্ষের ক্ষমতা। এক বছর বাদে হলেন অধ্যক্ষ। অধ্যক্ষ পদের সঙ্গে ১৮৫৪ থেকে দক্ষিণ বাংলা স্কুল ইন্সপেক্টরের পদেও কাজ করেছেন তিনি। এই সময়ে অনেক সংস্কারমূলক কাজ করে সংস্কৃত কলেজকে মর্যাদামণ্ডিত করলেন এবং ছাত্রদের বহুমুখী কর্মজীবন সুনিশ্চিত করলেন। ১৮৫৮ তে পদত্যাগের পরে আর কখনও চাকরি করেননি।

১৭ বছর ফোর্ট উইলিয়ম কলেজ ও সংস্কৃত কলেজে কাজ করলেও কর্মযোগী বিদ্যাসাগর কলেজের গণ্ডিটুকুর মধ্যে আবদ্ধ ছিলেন না। উদার ও প্রগতিশীল শিক্ষা ভাবনার জন্য অল্পদিনর মধ্যে তাঁর সঙ্গে শিক্ষা সমিতির অধ্যক্ষ ড. মোয়াট, ছোটলাট হ্যালিডে এবং বড়লাট লর্ড হাড়ির্ঞ্জের ঘনিষ্ঠতা হয়। এদেশে শিক্ষা প্রসারে তাঁরা বিদ্যাসাগরের পরামর্শকেই মান্য করতেন। তাঁরই পরামর্শে প্রথমে দেশে ১০১টি পাঠশালা (বঙ্গ বিদ্যালয়) এবং পরে তাঁর প্রত্যক্ষ উদ্যোগে দক্ষিণবঙ্গে স্থাপিত হয় কুড়িটি মডেল স্কুল, একটি শিক্ষক শিক্ষণ নর্মাল স্কুল এবং পঁয়ত্রিশটি বালিকা বিদ্যালয়। তাছাড়া সম্পূর্ণ নিজ অর্থে বীরসিংহে স্থাপন করেন অবৈতনিক বিদ্যালয় ও নৈশ বিদ্যালয় (নাইট স্কুল বা রাখাল বিদ্যালয়)।

শুধু বঙ্গদেশে নয়, সমগ্র ভারতবর্ষেই সর্বপ্রথম নাইট স্কুল প্রতিষ্ঠার গৌরব বিদ্যাসাগর মশাইয়ের।

চাকুরি ত্যাগের পরে গড়ে তোলেন মেট্রোপলিটন স্কুল ও কলেজ (বর্তমান বিদ্যাসাগর কলেজ) এবং বীরসিংহে ভগবতী বালিকা বিদ্যালয়। কেবল স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠা নয়। এদেশে শিক্ষা বিস্তারে বাংলা পাঠ্য বই রচনার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছিলেন পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র। সেকালে বাংলা ভাষা শিক্ষার কোন বই ছিল না। বিদ্যাসাগর লিখলেন বর্ণ পরিচয় ১ম ভাগ ও ২য় ভাগ, কথামালা, বোধদয়, বেতাল পঞ্চবিংশতি প্রভৃতি বাংলা বই। কেবল বই লেখা নয়- ছাপার জন্য ছাপাখানা (সংস্কৃত যন্ত্র), বিক্রয়ের জন্য বইর দোকান (সংস্কৃত প্রেস ডিপজিটরি), সবই তাঁকে করতে হয়েছিল। এককথায় তিনি এদেশে বাংলা শিক্ষার ভগীরথ। হেমচন্দ্র যথার্থই তাঁকে

'অদ্বিতীয় বাঙালা ভাষার শিক্ষাগুরু' বলেছেন। আশুতোষ বলেছেন-'শিক্ষাই ছিল তাঁহার জীবনের মূলমন্ত্র ...ইহাই ছিল তাঁহার জীবনের একমাত্র সাধনা। সেই সাধনার উত্তরাধিকার আমরা লাভ করিয়াছি।'

পাঠ্য পুস্তক লিখতে গিয়ে তিনিই সৃষ্টি করলেন প্রথম বাংলা গদ্য সাহিত্য এবং যথার্থ সাহিত্যিক বাংলা গদ্য। সুকুমার সেন বলেছেন-

'বিদ্যাসাগরের আগে বাংলা গদ্যের চল ছিল চাল ছিল না।'

সীতার বনবাস, ভ্রান্তিবিলাস সহ রচিত বইগুলির ভিত্তিতেই রবীন্দ্রনাথ তাঁকে বলেছেন-

'বাংলা গদ্যের জনক'

, শ্রদ্ধা জানিয়েছেন তাঁর অনুপম ভাষায় -

বঙ্গসাহিত্যের রাত্রি স্তব্ধ ছিল তন্দ্রার আবেশে

অখ্যাত জড়তমভারে অভিভূত। কী পুণ্য নিমেষে

তব শুভ অভুদ্যয়ে বিকিরিল প্রদীপ্ত প্রতিভা

প্রথম আশার রশ্মি নিয়ে এল প্রত্যুষের বিভা,

বঙ্গভারতীর ডালে পরাল প্রথম জয়টীকা।

রুদ্ধ-ভাষা আঁধারের খুলিলে নিবিড় যবনিকা,

হে বিদ্যাসাগর, পূর্ব দিগন্তের বনে উপবনে

নব উদ্বোধন গাথা উচ্ছসিল বিস্মিত গগনে,

যে বাণী আনিলে বহি নিষ্কলুষ তাহা শুভ্ররুচি।

সকরুণ মহাত্মার পুন্যগঙ্গাস্নানে তাহা শুচি।

ভাষার প্রাঙ্গণে তব আমি কবি তোমারি অতিথি,

ভারতীর পূজা তরে চয়ন করেছি আমি গীতি

সেই তরুতল হতে যা তোমার প্রসাদ সিঞ্চনে

মরুর পাষাণ ভেদি প্রকাশ পেয়েছে শুভক্ষণে।।

বাংলার নবজাগৃতির অন্যতম অভিমুখ শিক্ষা সম্পর্কে সচেতনতা। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে শিক্ষার আলোকে সিঞ্চিত না হলে দেশের অগ্রগতি অসম্ভব-এই উপলব্ধি থেকে যে সামান্য কয়েকজন মহাপ্রাণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠায় এবং শিক্ষা বিস্তারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন, তাদের মধ্যে অন্যতম পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। তাঁর জীবনের মূল ধারা শিক্ষা সংস্কার ও প্রসারের পথ বেয়ে প্রবাহিত।

তিনি শুধু বিদ্যার সাগর ছিলেন না, ছিলেন দয়ারও সাগর। সে দয়া বেহিসাবী দয়া, অপরিমিত দয়া। নিজের ভাগ বজায় রেখে দয়া নয়, অনেক আছে বলে তার একটা অংশে কৃপা বিতরণ নয়- সম্পূর্ণ নিঃস্ব হয়ে নিজেকে উৎসর্গ করার মত দয়া। মধুসূদন তাঁর সনেটে বিদ্যাসাগরকে বলেছেন করুণার সিন্ধু -

বিদ্যার সাগর তুমি বিখ্যাত ভারতে।

করুণার সিন্ধু তুমি, সেই জানে মনে,

দীন যে, দীনের বন্ধু! উজ্জ্বল জগতে

হেমাদ্রির হেম-কান্তি অম্লান কিরণে।

কিন্তু ভাগ্য -বলে পেয়ে সে মহাপর্বতে,

যে জন আশ্রয় লয় সুবর্ণ চরণে,

সেই জানে কত গুণ ধরে কত মতে

গিরীশ। কি সেবা তার সে সুখ-সদনে!

দানে বারি নদী রূপ বিমলা কিঙ্করী;

যোগায় অমৃত ফল পরম আদরে

দীর্ঘ-শিরঃ তরু দল, দাসরূপ ধরি;

পরিমলে ফুলকুল দশ দিশ ভরে;

দিবসে শীতল শ্বাসী ছায়া, বনেশ্বরী,

নিশায় সুশান্ত নিদ্রা, ক্লান্তি দূর করে!

চেনা-অচেনা কত মানুষ যে তাঁর আর্থিক সাহায্য লাভ করেছে, তার ইয়াত্তা নাই। প্রতি মাসে তালিকা মত নিয়মিত অর্থ সাহায্য ছাড়া আচমকা অনেক দায় তাঁকে বইতে হত। কিশোর নবীন সেন (কবি) পিতৃহীন, অসহায়। লেখাপড়া বন্ধ হতে যায়। বিদ্যাসাগর তাঁর পাশে দঁড়ালেন। ফ্রান্সে কবি মধুসূধন ঋণগ্রস্ত। তাই অপরিচিত বিদ্যাসাগরকে চিঠি লিখলেন সাহায্য চেয়ে। ঋণ করেই বিদ্যাসাগর কবির টাকা পাঠালেন-সেই ঋণ শোধ করতে তাঁকে পরবর্তীকালে ছাপাখানার অংশ বিক্রি করতে হয়েছিল। মধুসূদন তাঁর বীরাঙ্গনা কাব্য উৎসর্গ করেছেন বিদ্যাসাগরকে। মধুসূদন লিখেছেন -“The genius and wisdom of an ancient sage, the energy of an Englishman and the heart of a Bengali mother.”

পথে চলেছেন বিদ্যাসাগর-হঠাৎ শোনেন একটি ঘরে কান্নার শব্দ। বাচ্চাদের মুখে খাবার তুলে দেবার মত কিছুই নেই মায়ের। ঘরে ঢুকলেন বিদ্যাসাগর। দশ টাকা এগিয়ে দিলেন মায়ের হাতে। সাধে কি শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছেন-"তুমি তো খুব নরম, তোমার এত দয়া!" সামনে কেউ তাঁর প্রশংসা করলে রসিকতার ছলে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতেন। এই প্রসঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণের সঙ্গে বিদ্যাসাগরের কথোপকথন উল্লেখযোগ্য-

শ্রীরামকৃষ্ণ-আজ সাগরে এসে মিললাম। এতদিন খাল হদ্দ নদী দেখেছি, এইবার সাগর দেখছি। (সকলের হাস্য)

বিদ্যাসাগর (সহাস্যে)- তবে নোনা জল খানিকটা নিয়ে যান! (হাস্য)

শ্রীরামকৃষ্ণ-না গো! নোনা জল কেন? তুমি তো অবিদ্যার সাগর নও, তুমি যে বিদ্যার সাগর! (সকলের হাস্য) তুমি ক্ষীরসমুদ্র (সকলের হাস্য)

বিদ্যাসাগর-তা বলতে পারেন বটে।

বিদ্যাসাগর চুপ করিয়া রহিলেন। ঠাকুর কথা কহিতেছেন-

[বিদ্যাসাগরের সাত্ত্বিক কর্ম -তুমিও সিদ্ধ পুরুষ]

'তোমার কর্ম সাত্তিক কর্ম। সত্ত্বের রজঃ। সত্ত্বগুণ থেকে দয়া হয়। দয়ার জন্য যে কর্ম করা যায়, সে রাজসিক কর্ম বটে- কিন্তু এ রজোগুণ- সত্ত্বের রজোগুণ, এতে দোষ নাই। শুকদেবাদি লোকশিক্ষার জন্য দয়া রেখেছিলেন - ঈশ্বর-বিষয় শিক্ষা দিবার জন্য। তুমি বিদ্যাদান অন্নদান করছ, এও ভাল। নিষ্কাম করতে পারলেই এতে ভগবান লাভ হয়। কেউ করে নামের জন্য, পুণ্যের জন্য, তাদের কর্ম নিষ্কাম নয়। আর সিদ্ধ তো তুমি আছই।'

বিদ্যাসাগর- মহাশয়, কেমন করে?

শ্রীরামকৃষ্ণ (সহাস্য)-আলু পটল সিদ্ধ হলে তো নরম হয়, তা তুমি তো খুব নরম। তোমার অত দয়া! (হাস্য)

বিদ্যাসাগর (সহাস্য)- কলাই বাটা সিদ্ধ তো শক্তই হয়! (সকলের হাস্য)

শ্রীরামকৃষ্ণ-তুমি তা নও গো; শুধু পণ্ডিতগুলো দরকচা পড়া! না এদিক, না ওদিক। শকুনি খুব উঁচুতে উঠে, তার নজর ভাগাডে়। যারা শুধু পণ্ডিত শুনতেই পণ্ডিত, কিন্তু তাদের কামিনী-কাঞ্চনে আসক্তি- শকুনির মতো পচা মড়া খুঁজছে। আসক্তি অবিদ্যার সংসারে। দয়া, ভক্তি, বৈরাগ্য বিদ্যার ঐশ্বর্য।"

বিধবা বিবাহ আন্দালনে তাঁর হৃদয়বত্তা ও পৌরুষের সর্বোত্তম বিকাশ ঘটেছিল। একে তিনি বলেছেন, তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় সৎকর্ম। দেশাচারের প্রবল বিরুদ্ধতার সম্মুখীন হতে হয়েছে তাঁকে। গোঁড়া হিন্দুদের শাস্ত্রীয় যুক্তিজাল অবলীলায় ছিন্ন করেছেন শাস্ত্রীয় যুক্তি দিয়েই।'কস্যচিৎউপযুক্ত ভাইপোস্য' ও 'কস্যচিৎ উপযুক্ত ভাইপো সহচরস্য' ছদ্মনামে শানিত কৃপাণের ভাষায় রচনা করেছেন 'অল্প হইল',' অতি অল্প হইল' প্রভৃতি বিদ্রৃপাত্মক পুস্তিকা। প্রাণ সংশয় হবার আশঙ্কাও ছিল। কিন্তু সমস্ত বাধা অতিক্রম করে তিনি শেষ পর্যন্ত স্থির ভাবে দণ্ডায়মান ছিলেন।' কেবল বিধবা বিবাহ আইন পাশ করানো নয়, বিধবা বিবাহের ব্যবস্থায় লক্ষাধিক টাকা তাঁকে ব্যয় করতে হয়েছিল।

ধর্ম নিরপক্ষ সত্যানুসন্ধান ও মানবতাবাদ তাঁর মনুষ্যত্বের আর এক পরিচয়। গোঁড়া হিন্দু পণ্ডিতদের সঙ্গে তিনি আলেকজান্দ্রিয়া গ্রন্থশালা দহনকারী গোঁড়া খালিফাদের তুলনা করতে পারেন অনায়াসে; সকল জাতের জন্য সংস্কৃত কলেজের দ্বার উন্মুক্ত করতে পারেন; কাশীর পাণ্ডাদের ধিক্কার দিয়ে বিশ্বনাথ দর্শনের চেয়ে মা-বাবার চরণ বন্দনা পুণ্যকর্ম বলে ঘোষনা করেন; কলেজের পিয়নকে রাজা জমিদারদের সঙ্গে একই ফরাসে বসাতে তাঁর বাধে না। এই মহত্ত্বের উপলব্ধি ছিল না সে যুগে। তাই এসেছে অজস্র আঘাত। নিন্দা-কৃতঘ্নতার ইয়াত্তা ছিল না। বঙ্কিমচন্দ্র সহ সেকালের অনেক গন্যমান্য ব্যক্তিও তাঁকে বিদ্রৃপ করেছেন। ভাগ্য নিপীড়িত বিদ্যাসাগরের শেষ জীবন আদৌ শান্তির ছিল না। দীর্ঘদিন কার্মাটাঁড়ে সাঁওতাল পল্লীতে প্রায় স্বেচ্ছা নির্বাসনে কাটিয়েছেন তিনি। শেষ জীবনে স্ত্রী-পুত্র বা ভাইদের সঙ্গেও তাঁর সম্পর্ক সুখের ছিল না। আর্থিক অবস্থা সঙ্গীন। তবুও নৈতিক দায়িত্ব পালনে, সমাজকর্মে এবং দানে তিনি ছিলেন অবিচল।

'অজেয় পৌরুষ' ও 'অক্ষয় মনুষ্যত্ব' যে বিদ্যাসাগরের চরিত্রের 'প্রধান গৌরব' রবীন্দ্রনাথের এ উপলব্ধি কতখানি সত্য তা আজ সময় প্রমাণ করে দিচ্ছে। তবে বাঙালি জাতির মধ্যে যে তিনি 'অনন্য' এ বিষয়ে গোপাল হালদার মহাশয়ের সঙ্গে সহমত পোষণ না করে আমাদের উপায় নেই। 'কার' সাহেবের সেই বুট জুতো ও বিদ্যাসাগরের চটি জুতোর কাহিনি থেকে কার্মাটাঁড়ে যাওয়া পর্যন্ত যে দৃপ্ত পৌরুষ ও আত্ম সম্মান বোধের দৃষ্টান্ত তিনি রেখেছেন তা চিরকাল আমাদের পাথেয়। আজ এই বাঙালি জাতি চাকুরির জন্য কতকিছুই না করেন অথচ বিদ্যাসাগর মহাশয় উচ্চপদের চাকুরি অনায়াসে ছেড়েছেন কিন্তু কোন অনিয়মের কাছে মাথা নত করেননি। কোথায় আজ সেই বজ্রনিঘোষ বানী, 'রসময় দত্তকে বোলো, বাজারে আলু পটল বেচব, তবু মত বিকিয়ে চাকরি করব না'

এই দৃঢ়চেতা মানুষের জীবনী পাঠ ও চর্চা তাঁকে পূজা করার থেকে অনেক বেশি জরুরী বলেই আমার এই প্রবন্ধ লেখার প্রয়াস।

মহাত্মা গান্ধি বলিষ্ঠ কণ্ঠে বলেছিলেন-

"Biginning with Rammohan roy, one heroic fighter after another, has raised Bengal to a position higher then that of other provinces. It can be said that Iswar Chandra Vidyasagar was the greatest among them."

অবশেষে ১৮৯১ এর ২৯ জুলাই ঈশ্বরচন্দ্র চলে গেলেন ঈশ্বরের কাছে। তিনি ঈশ্বর সম্বন্ধে কিরূপ ভাবেন। এই প্রশ্নের উত্তরে বিদ্যাসাগর বলেছিলেন -"তাঁকে তো জানবার জো নাই! এখন কর্তব্য কি? আমার মতে কর্তব্য, আমাদের নিজের এরূপ হওয়া উচিত যে, সকলে যদি সেরূপ হয়, পৃথিবী স্বর্গ হয়ে পড়বে। প্রত্যেকের চেষ্টা করা উচিত যাতে জগতের মঙ্গল হয়।"

বিদ্যাসাগর স্মৃতিমন্দির, মেদিনীপুর (চিত্রগ্রাহক - অরিন্দম ভৌমিক, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০০৯)
বিদ্যাসাগর স্মৃতিমন্দির, মেদিনীপুর (চিত্রগ্রাহক - অরিন্দম ভৌমিক, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০০৯)

বিদ্যাসাগর রচিত গ্রন্থাবলি


শিক্ষামূলক গ্রন্থ

● বর্ণপরিচয় (১ম ও ২য় ভাগ ; ১৮৫৫)

● ঋজুপাঠ (১ম, ২য় ও ৩য় ভাগ ; ১৮৫১-৫২)

● সংস্কৃত ব্যাকরণের উপক্রমণিকা (১৮৫১)

● ব্যাকরণ কৌমুদী (১৮৫৩)

শিক্ষামূলক গ্রন্থ

● হিন্দি থেকে বাংলা - বেতাল পঞ্চবিংশতি (১৮৪৭ ; লল্লুলাল কৃত বেতাল পচ্চীসী অবলম্বনে)

● সংস্কৃত থেকে বাংলা - শকুন্তলা (ডিসেম্বর, ১৮৫৪ ; কালিদাসের অভিজ্ঞানশকুন্তলম্ অবলম্বনে)

● সংস্কৃত থেকে বাংলা - সীতার বনবাস (১৮৬০ ; ভবভূতির উত্তর রামচরিত ও বাল্মীকি রামায়ণ-এর উত্তরাকান্ড অবলম্বনে)

● সংস্কৃত থেকে বাংলা - মহাভারতের উপক্রমণিকা (১৮৬০ ; ব্যাসদেব মূল মহাভারত-এর উপক্রমণিকা অংশ অবলম্বনে)

● সংস্কৃত থেকে বাংলা - বামনাখ্যানম্ (১৮৭৩ ; মধুসূদন তর্কপঞ্চানন রচিত ১১৭টি শ্লোকের অনুবাদ)

● ইংরেজি থেকে বাংলা - বাঙ্গালার ইতিহাস (১৮৪৮ ; মার্শম্যান কৃত হিস্ট্রি অফ বেঙ্গল অবলম্বনে রচিত)

● ইংরেজি থেকে বাংলা - জীবনচরিত (১৮৪৯ ; চেম্বার্সের বায়োগ্রাফিজ অবলম্বনে রচিত)

● ইংরেজি থেকে বাংলা - নীতিবোধ (প্রথম সাতটি প্রস্তাব – ১৮৫১ ; রবার্ট ও উইলিয়াম চেম্বার্সের মরাল ক্লাস বুক অবলম্বনে রচিত)

● ইংরেজি থেকে বাংলা - বোধোদয় (১৮৫১ ; চেম্বার্সের রুডিমেন্টস অফ নলেজ অবলম্বনে রচিত)

● ইংরেজি থেকে বাংলা - কথামালা (১৮৫৬ ; ঈশপস ফেবলস অবলম্বনে রচিত)

● ইংরেজি থেকে বাংলা - চরিতাবলী (১৮৫৭ ; বিভিন্ন ইংরেজি গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা অবলম্বনে রচিত)

● ইংরেজি থেকে বাংলা - ভ্রান্তিবিলাস (১৮৬৯ ; শেক্সপিয়রের কমেডি অফ এররস অবলম্বনে রচিত)

ইংরেজি গ্রন্থ

● পোয়েটিক্যাল সিলেকশনস্

● সিলেকশনস্ ফ্রম গোল্ডস্মিথ

● সিলেকশনস্ ফ্রম ইংলিশ লিটারেচার


মৌলিক গ্রন্থ

● সংস্কৃত ভাষা ও সংস্কৃত সাহিত্য বিষয়ক প্রস্তাব (১৮৫৩)

● বিধবা বিবাহ চলিত হওয়া উচিত কিনা এতদ্বিষয়ক প্রস্তাব (১৮৫৫)

● বহুবিবাহ রহিত হওয়া উচিত কিনা এতদ্বিষয়ক প্রস্তাব (প্রথম খন্ড ১৮৭১, ২য় খন্ড ১৮৭৩)

● অতি অল্প হইল এবং ”আবার অতি অল্প হইল দুখানা পুস্তক (১৮৭৩, বিধবা বিবাহ বিরোধী পন্ডিতদের প্রতিবাদের উত্তরে 'কস্যচিৎ উপযুক্ত ভাইপোস্য' ছদ্মনামে।)

● ব্রজবিলাস (১৮৮৪)

● রত্নপরীক্ষা (১৮৮৬)

● প্রভাবতী সম্ভাষণ (সম্ভবত ১৮৬৩)

● জীবন-চরিত (১৮৯১ ; মরণোত্তর প্রকাশিত)

● শব্দমঞ্জরী (১৮৬৪)

● নিষ্কৃতি লাভের প্রয়াস (১৮৮৮)

● ভূগোল খগোল বর্ণনম্ (১৮৯১ ; মরণোত্তর প্রকাশিত)

সম্পাদিত গ্রন্থ

● অন্নদামঙ্গল (১৮৪৭)

● কিরাতার্জ্জুনীয়ম্ (১৮৫৩)

● সর্বদর্শনসংগ্রহ (১৮৫৩-৫৮)

● শিশুপালবধ (১৮৫৩)

● কুমারসম্ভবম্ (১৮৬২)

● কাদম্বরী (১৮৬২)

● বাল্মীকি রামায়ণ (১৮৬২)

● রঘুবংশম্ (১৮৫৩)

● মেঘদূতম্ (১৮৬৯)

● উত্তরচরিতম্ (১৮৭২)

● অভিজ্ঞানশকুন্তলম্ (১৮৭১)

● হর্ষচরিতম্ (১৮৮৩)

● পদ্যসংগ্রহ প্রথম ভাগ (১৮৮৮ ; কৃত্তিবাসি রামায়ণ থেকে সংকলিত)

● পদ্যসংগ্রহ দ্বিতীয় ভাগ (১৮৯০ ; রায়গুণাকর ভারতচন্দ্র রচিত অন্নদামঙ্গল থেকে সংকলিত)


চলচিত্রায়ণ

তার লেখা অনুবাদিত গল্পে অবলম্বনে তৈরী হয় ভ্রান্তিবিলাস চলচ্চিত্র।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সম্পর্কে প্রকাশিত গ্রন্থপঞ্জি

● বিদ্যাসাগর - চণ্ডীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় (Esa. Ke. Lāhiṛī eṇḍa Koṃ, 1929 - Authors, Bengali - 563 pages)

● অঞ্জলি বসু (সম্পাদিত) ; ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর : সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, ১৯৭৬

● অমরেন্দ্রকুমার ঘোষ ; যুগপুরুষ বিদ্যাসাগর : তুলিকলম, কলকাতা, ১৯৭৩

● অমূল্যকৃষ্ণ ঘোষ ; বিদ্যাসাগর : দ্বিতীয় সংস্করণ, এম সি সরকার, কলকাতা, ১৯১৭

● অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় ; বাংলা সাহিত্যে বিদ্যাসাগর : মণ্ডল বুক হাউস, কলকাতা, ১৯৭০

● ইন্দ্রমিত্র ; করুণাসাগর বিদ্যাসাগর : আনন্দ পাবলিশার্স, কলকাতা, ১৯৬৬

● গোপাল হালদার (সম্পাদিত) ; বিদ্যাসাগর রচনা সম্ভার (তিন খণ্ডে) : পশ্চিমবঙ্গ নিরুক্ষরতা দূরীকরণ সমিতি, কলকাতা, ১৯৭৪-৭৬

● বদরুদ্দীন উমর ; ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও উনিশ শতকের বাঙালি সমাজ : দ্বিতীয় সংস্করণ, চিরায়ত, কলকাতা, ১৯৮২

● বিনয় ঘোষ ; বিদ্যাসাগর ও বাঙালি সমাজ : বেঙ্গল পাবলিশার্স, কলকাতা, ১৩৫৪ বঙ্গাব্দ

● বিনয় ঘোষ ; ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর : অনুবাদক অনিতা বসু, তথ্য ও বেতার মন্ত্রক, নয়াদিল্লি, ১৯৭৫

● ব্রজেন্দ্রকুমার দে ; করুণাসিন্ধু বিদ্যাসাগর : মণ্ডল অ্যান্ড সন্স, কলকাতা, ১৯৭০

● মহম্মদ আবুল হায় আনিসুজ্জামন ; বিদ্যাসাগর রচনা সংগ্রহ : স্টুডেন্টস ওয়েজ, ঢাকা, ১৯৬৮

● যোগেন্দ্রনাথ গুপ্ত ; বিদ্যাসাগর : পঞ্চম সংস্করণ, কলকাতা, ১৯৪১

● যোগীন্দ্রনাথ সরকার ; বিদ্যাসাগর : ১৯০৪

● রজনীকান্ত গুপ্ত ; ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর : ১৮৯৩

● রমাকান্ত চক্রবর্তী (সম্পাদিত) ; শতবর্ষ স্মরণিকা : বিদ্যাসাগর কলেজ, ১৮৭২-১৯৭২ : বিদ্যাসাগর কলেজ, ১৯৭২

● রমেশচন্দ্র মজুমদার ; বিদ্যাসাগর : বাংলা গদ্যের সূচনা ও ভারতের নারী প্রগতি : জেনারেল প্রিন্টার্স অ্যান্ড পাবলিশার্স, কলকাতা, ১৩৭৬ বঙ্গাব্দ

● রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ; বিদ্যাসাগর-চরিত : বিশ্বভারতী গ্রন্থনবিভাগ, কলকাতা

● রাধারমণ মিত্র ; কলিকাতায় বিদ্যাসাগর : জিজ্ঞাসা, কলিকাতা, ১৯৪২

● রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী ; চরিত্র কথা : কলকাতা, ১৯১৩

● শঙ্করীপ্রসাদ বসু ; রসসাগর বিদ্যাসাগর : দ্বিতীয় সংস্করণ, দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা, ১৯৯২

● শঙ্খ ঘোষ ও দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় (সম্পাদিত) ; বিদ্যাসাগর : ওরিয়েন্ট, কলকাতা

● শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন ; বিদ্যাসাগর চরিত : কলকাতা, ১২৯৪ বঙ্গাব্দ

● শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন ; বিদ্যাসাগর জীবনচরিত : কলকাতা

● শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন ; বিদ্যাসাগর চরিত ও ভ্রমণিরাস : চিরায়ত, কলকাতা, ১৯৯২

● শশিভূষণ বিদ্যালঙ্কার ; ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর : জীবনীকোষ, ভারতীয় ঐতিহাসিক, কলকাতা, ১৯৩৬

● শামসুজ্জামান মান ও সেলিম হোসেন ; ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর : চরিতাভিধান : বাংলা একাডেমী, ঢাকা, ১৯৮৫

● সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ও সজনীকান্ত দাস (সম্পাদিত) ; বিদ্যাসাগর গ্রন্থাবলী (তিন খণ্ডে) : বিদ্যাসাগর স্মৃতি সংরক্ষণ সমিতি, কলকাতা, ১৩৪৪-৪৬ বঙ্গাব্দ

● সন্তোষকুমার অধিকারী ; বিদ্যাসাগর জীবনপঞ্জি : সাহিত্যিকা, কলকাতা, ১৯৯২

● সন্তোষকুমার অধিকারী ; আধুনিক মানসিকতা ও বিদ্যাসাগর : বিদ্যাসাগর রিসার্চ সেন্টার, কলকাতা, ১৯৮৪

● হরিসাধন গোস্বামী ; মার্কসীয় দৃষ্টিতে বিদ্যাসাগর : ভারতী বুক স্টল, কলকাতা, ১৯৮৮

অরিন্দম ভৌমিক

৩০ মে ২০১৯, সন্ধা ৭ টা

বিদ্যাসাগর স্মৃতিমন্দির, মেদিনীপুর।

midnapore.in

[ এই প্রবন্ধটি অরিন্দম ভৌমিক কর্তৃক সংকলিত "বিদ্যাসাগর চরিত" গ্রন্থের 'প্রসঙ্গ কথা' থেকে নেওয়া। গ্রন্থের লেখক স্বয়ং ঈস্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। প্রথম প্রকাশ - ০৮ জুন ২০১৯ (বিশ্ব মহাসাগর দিবস) / দ্বিতীয় সংস্করণ - ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ (গণেশ চতুর্থী) / তৃতীয় সংস্করণ - ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ (বিশ্বকর্ম্মা পূজা) / চতুর্থ সংস্করণ - ২৯ জুলাই ২০২০ (তিরোধান দিবস) ]